
যশপ্রীত বুমরার অভাব কতটা প্রকট, তা আবারও প্রমাণিত হলো সিডনি টেস্টে। চোটের কারণে এই পেসারের অনুপস্থিতিতে দুর্বল হয়ে পড়া ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে সহজেই সামলে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি পুনরুদ্ধার করলো অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্সের নেতৃত্বাধীন দল সিডনি টেস্টে ৬ উইকেটে জয়লাভ করে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘ দশ বছর পর এই মর্যাদাপূর্ণ ট্রফিটি অস্ট্রেলিয়ার ঘরে ফিরলো।
ম্যাচ শুরুর আগেই প্রাক্তন অজি পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রা বলেছিলেন, বুমরা না থাকলে এই সিরিজ একতরফা হতে পারে। সিডনি টেস্টের তৃতীয় দিনে ম্যাকগ্রার সেই কথাই যেন সত্যি হলো। চতুর্থ ইনিংসে ১৬২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই কিছুটা হোঁচট খেলেও শেষ পর্যন্ত সহজেই জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।
অস্ট্রেলিয়া রান তাড়া করতে নেমে ৫৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল। প্রসিধ কৃষ্ণার দুর্দান্ত বোলিংয়ে স্যাম কনস্টাস, মারনাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথের উইকেট হারায় অজিরা। এক বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফিরে কৃষ্ণা বেশ ভালো পারফরমেন্স করেন। ভারতের তখনো সুযোগ ছিল, কারণ অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য তখনও ১০৪ রান বাকি ছিল। কিন্তু বুমরার অনুপস্থিতি খাজা এবং হেডের কাজ অনেক সহজ করে দেয়।
পুরো সিরিজে বুমরা একাই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটিং লাইনআপের সামনে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। মাঠ ছাড়ার আগে পর্যন্ত তিনি একাই ৩২টি উইকেট নিয়েছিলেন, যেখানে ভারতের অন্য কোনো বোলারের ২০টিও উইকেট ছিল না। চোটের কারণে বুমরা আর বোলিং করতে পারেননি, এমনকি ফিল্ডিংও করেননি।
বুমরার অভাব সত্ত্বেও কৃষ্ণা ও মোহাম্মদ সিরাজ যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। তবে উসমান খাজা ও ট্রাভিস হেডের ৪৪ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে জয়ের পথে অনেকখানি এগিয়ে দেয়। এরপর ওয়েবস্টারকে সাথে নিয়ে হেড দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ওয়েবস্টারের অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। টেস্ট অভিষেকে প্রথম ইনিংসে অর্ধশতরান করা এই অলরাউন্ডার ৩৪ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ওয়াশিংটন সুন্দরকে বাউন্ডারি মেরে তিনি দলের জয় নিশ্চিত করেন। হেডও ৩৪ বলে অপরাজিত থাকেন।
স্কট বোল্যান্ড তার অসাধারণ বোলিংয়ের জন্য ম্যাচসেরা হন। তিনি ৪৫ রানে ৬ উইকেট নেন। জশ হ্যাজলউডের পরিবর্তে এই সিরিজে তৃতীয়বারের মতো খেলতে নেমে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।
যদিও বুমরা পুরো সিরিজে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন, কিন্তু শেষ হাসিটা হেসেছে অস্ট্রেলিয়াই। ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর এই প্রথম তারা বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জিতলো। এই জয়ের ফলে প্যাট কামিন্সের দল টানা দ্বিতীয়বারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। জুনে লর্ডসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই পরাজয়ের ফলে টানা চারটি বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জেতার পর ভারতের এই যাত্রার সমাপ্তি ঘটলো এবং তারা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল থেকেও ছিটকে গেল।